453575663 3452592935041295 1453698806583440304 n 1
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

ভূমিকা

কোটা বিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষা এবং চাকরি ক্ষেত্রে একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক ইস্যু। ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন পূর্ববর্তী আন্দোলনগুলোর ধারাবাহিকতার অংশ, যা সমগ্র দেশে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। আন্দোলনটি মূলত শিক্ষা এবং সরকারি চাকরিতে মেধা ভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গড়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ছাত্রসমাজকে একত্রিত করা হয়েছে। এই প্রবন্ধে কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ২০২৪ সালের আন্দোলনের কারণ, এবং বিএনপি’র এই আন্দোলনে অবদানের ওপর বিশদ আলোচনা করা হবে।

কোটা আন্দোলনের পটভূমি

453277586 336992892815614 8487254869798907673 n
কক্সবাজার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছবি

কোটা পদ্ধতি বাংলাদেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং বিতর্কিত ইস্যু। এটি মূলত স্বাধীনতার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুযোগ দেয়ার জন্য প্রণীত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, উপজাতি, নারী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ কোটা বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তবে সময়ের সাথে সাথে এই কোটাব্যবস্থার বিরোধিতা বাড়তে থাকে, কারণ অনেকের মতে এটি মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে।

২০১৮ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলন ছিল এ বিষয়ে এক বিশাল মাইলফলক। সেসময় ছাত্র সমাজ ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে, যার ফলে সরকার কোটা পদ্ধতির সংস্কারের আশ্বাস দেয়। কিন্তু কোটার পূর্ণ সংস্কার বা বাতিল না হওয়ায়, ২০২৪ সালের আন্দোলনের সূচনা ঘটে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪

quota1

২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন পূর্ববর্তী আন্দোলনের সূত্র ধরে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বর্তমান আন্দোলনটি মূলত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মাধ্যমে শুরু হয়, যারা মনে করে যে কোটা পদ্ধতির কারণে মেধাবীরা পর্যাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে না। সরকার যদিও কোটা পদ্ধতিতে কিছু সংস্কার এনেছে, কিন্তু তা আন্দোলনকারীদের দাবি পূরণে যথেষ্ট মনে করা হয়নি।

এই আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল:

  1. কোটার পরিমাণ কমানো: মোট নিয়োগের উপর নির্ধারিত কোটার অংশ হ্রাস করা।
  2. মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা: শিক্ষার্থীরা চায়, মেধার ভিত্তিতে যেন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
  3. কোটা ব্যবস্থার স্বচ্ছতা: কোটাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা।

২০২৪ সালের আন্দোলনে দেশব্যাপী ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পৃক্ততা ছিল লক্ষ্যণীয়। তারা মনে করেছিল, কোটা পদ্ধতির প্রভাবের কারণে মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাই অবিলম্বে সংস্কার প্রয়োজন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনের পাশাপাশি ২০২৪ সালে একটি বৃহত্তর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও শুরু হয়, যেখানে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রী বৈষম্য এবং অসম বণ্টনের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে। এ আন্দোলনটি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংঘটিত হয়, যেখানে ছাত্ররা কোটার বিপরীতে আরও ন্যায়বিচার এবং মেধার গুরুত্ব আরোপ করে।

এ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রদের মধ্যে একতা। তারা সকলেই একটি অভিন্ন প্ল্যাটফর্মে এসে কোটা এবং অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের দাবি জানায়।

কোটা আন্দোলনে বিএনপি’র অবদান ২০২৪

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপি কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রতি গুরুত্বপূর্ণ সমর্থন প্রদান করেছে। যদিও এ আন্দোলনটি মূলত ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত, বিএনপি এই আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়ায় এবং সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে সাহায্য করে। বিএনপি’র মতে, কোটার অপব্যবহার মেধাবীদের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে এবং রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়াকে বিপথগামী করছে।

২০২৪ সালে বিএনপি কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলেও, তারা আন্দোলনকারীদের দাবিকে ন্যায়সঙ্গত বলে ঘোষণা করে। তারা এই আন্দোলনকে তাদের রাজনৈতিক মঞ্চে গুরুত্ব দিয়েছে এবং সরকারের বিরুদ্ধে কোটা সংস্কারের দাবিতে সমালোচনা করেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিএনপি’র এই অবদান আন্দোলনকারীদের মধ্যে সাহস ও সমর্থনের উৎস হিসেবে কাজ করেছে।

454201844 513161097794070 3471673322664173104 n

সমাপনী মন্তব্য

২০২৪ সালের কোটা বিরোধী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় যোগ করেছে। কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন মেধা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে একটি বিশাল পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিএনপি’র এই আন্দোলনে সমর্থন এবং অবদান আন্দোলনকে আরো গতিশীল করেছে। ভবিষ্যতে এই আন্দোলনের ফলাফল বাংলাদেশে মেধাবিরোধী প্রথার বিরুদ্ধে বড় পরিবর্তনের পথ দেখাতে পারে।

Shares:
Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *